মঙ্গলবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১২:৩৫
লখনউ: অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সাধারণ সভা, শিয়া সম্প্রদায়ের সমস্যা ও দাবির ওপর জোর

লখনউ: লখনউয়ে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সাধারণ সভায় দেশ ও বিদেশ থেকে আগত আলেম ও প্রতিনিধিরা শিয়া সম্প্রদায়ের সম্মুখীন শিক্ষাগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলোকে সংগঠিত ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে উত্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সাধারণ সভা ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে লখনউয়ের ঐতিহাসিক হুসাইনিয়া আসাফুদ্দৌলা বাহাদুর, বড় ইমামবাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের সভাপতি মাওলানা সাইম মেহদি। সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত আলেম, খতিব, বুদ্ধিজীবী ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিপুল উপস্থিতি ছিল।
সম্পূর্ণ ছবি দেখুন:
লখনউয়ে অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের ঐতিহাসিক সাধারণ সভা
এই সভায় জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, দিল্লি, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি নেপাল, বাংলাদেশ ও কানাডা থেকে আগত প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, যা সভার সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক চরিত্রকে স্পষ্ট করে তোলে।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ক্বারী নাদিম নাজাফির কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। সভার সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াসুব আব্বাস। সভাপতির ভাষণে মাওলানা সাইম মেহদি বোর্ড প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং ঘোষণা দেন যে, শিগগিরই জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে, যাতে স্থানীয় সমস্যাগুলো সংগঠিতভাবে উত্থাপন করা যায়।
বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াসুব আব্বাস তার প্রতিবেদনে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিত্বের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ড শুধু নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তব অর্থেই একটি সর্বভারতীয় প্ল্যাটফর্ম। তিনি বোর্ডের কার্যক্রম ও এ পর্যন্ত অর্জিত সাফল্যের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরেন।
বিহার ইউনিটের সভাপতি মাওলানা আসাদ ইয়াওয়ার বিহারে শিয়া সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করে জানান, শিগগিরই একটি প্রতিনিধি দল বিহারের গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবিসমূহ পেশ করবে। মুম্বাই থেকে আগত বোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ জাহির আব্বাস শিক্ষাগত ও রাজনৈতিক পশ্চাৎপদতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়।
শ্রীনগর থেকে মাওলানা মুহাম্মদ আব্বাস রিজভী যুবসমাজের ভবিষ্যতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আজকের যুবসমাজ আলেম ও নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে—তারা তাদের জন্য কী বাস্তব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা দেখার জন্য। উত্তরপ্রদেশের সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডা. আম্মার রিজভী রাজনৈতিক সচেতনতা ও ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বড় হওয়া সত্ত্বেও ঐক্যের অভাবে তাদের কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে পড়েছে।
হায়দরাবাদ দক্কন থেকে মাওলানা শানে হায়দার জায়েদী, ঝাড়খণ্ড থেকে মাওলানা তাহযিবুল হাসান, মধ্যপ্রদেশ থেকে মাওলানা নজর আব্বাস এবং কর্ণাটক থেকে মাওলানা মিকদার আবিদি নিজ নিজ অঞ্চলে শিয়া সম্প্রদায়ের সামাজিক, শিক্ষাগত ও ধর্মীয় সমস্যাগুলো সভার সামনে তুলে ধরেন। ঝাড়খণ্ড প্রসঙ্গে জানানো হয় যে, বোর্ডের প্রচেষ্টায় ১৩ রজব—হযরত আলী (আ.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি অনুমোদিত হয়েছে।
কানাডা থেকে আগত মাওলানা আহমদ রেজা হুসাইনি বিদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও পরিচয় ও চরিত্রের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তোলা সম্ভব। মাওলানা ইমাম হায়দার মিম্বর ও খুতবার বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য আলেমদের তত্ত্বাবধানের ওপর জোর দেন।
অন্যান্য বক্তারাও শিক্ষাগত পশ্চাৎপদতা, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অভাব এবং ধর্মীয় স্থানসমূহের সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন। জান্নাতুল বাকী পুনর্নির্মাণের দাবিও সভায় পুনরুল্লেখ করা হয় এবং ভারত সরকারের প্রতি কূটনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়টি উত্থাপনের আহ্বান জানানো হয়।
সভা শেষে মাওলানা এজাজ আতহার কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রস্তাবনাগুলো সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এ উপলক্ষে মহারাষ্ট্রের সহ-সভাপতি সরদার নওয়াব সাহেবের ম্যাগাজিনের উদ্বোধনও করা হয়।
সভাপতির অনুমতিক্রমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সভায় অংশগ্রহণকারী আলেম, খতিব ও প্রতিনিধিরা এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন যে, শিয়া সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলো সংগঠিত, সাংবিধানিক ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে উত্থাপন করা হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha